বেগুন এক ধরনের ফল যা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। বেগুন গাছ প্রায় ৪০ থেকে ১৫০ সেমি লম্বা হয়। পাতাগুলো হয় ঘন এবং প্রায় ১০ থেকে ২০ সেমি লম্বা ও ৫ থেকে ১০সেমি প্রশস্ত হয়ে থাকে। বেগুণের প্রজাতির মধ্যে বুনো বেগুন গাছ আরো বড় হতে পারে। বেগুনের ফুল সাদা এবং গোলাপী বর্ণের হয়। বেগুন ফুলের পাপড়ি থাকে পাঁচটি । বেগুনের ফলগুলো হয় বেগুনী বা সাদা বর্ণের। বেগুনের ফল অনেকটা লম্বাটে ও নলাকৃতির হয়ে থাকে। ফলের ভিতরে থাকে অনেকগুলো নরম বীজ।
বেগুনের ব্যবহার ও গুনাগুণ
এই বেগুন ভারত ও বাংলাদেশের প্রত্যেকটা রান্না ঘরে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। বেগুন তীক্ষ্ণ ও উষ্ণ এবং মধুর । এই বেগুন পিত্তনাশক, জ্বর কমায়, খিদে বাড়ায় এবং পরিপাক করা সহজ হয়। বেগুনের রান্নার ধরন ভর্তা, বেগুন পোড়া, এবং বেগুনী বানাতে এর ব্যবহার হয়ে থাকে প্রায় প্রতিটি বাঙালির ঘরেই। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমের ইফতারের জন্য বেগুনী একটি জনপ্রিয় খাবার। অন্যান্য সম্যেও বেগুনের ভর্তা অনেক জনপ্রিয় একটি খাবার। এটি গ্রামবাংলার অনেক সুস্বাদু একটি খাবার যা সকলেই পছন্দ করে থাকে।
আমাদের দেশে কমবেশি ১২ মাসই বাজারে বেগুন পাওয়া যায়। তবে বেগুন যখন রমজান মাসের ইফতারে বেগুনি হিসেবে পরিবেশন করা হয়, তখন ওই বেগুনের কদর যেমন বাড়ে, তেমনই বাড়ে মুল্যটা।
তবে শুধু বেগুনি নয় বেগুন ভর্তা, বেগুন ভাজি, বেগুনের সাথে মাছ বাঙালির খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। শুধু স্বাদের কারণে বেগুন জনপ্রিয় তা কিন্তু নয়, বেগুনেও রয়েছে বেশ উপকারি গুনাগুন যা শরীরের পুষ্টি পূরণের প্রয়োজনীয় সবজি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘একদিকে বেগুন খেতে যেমন সূস্বাদু তেমনি অন্যদিকে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজে রয়েছে পূর্ণ। আরও রয়েছে কার্বোহাইড্রেট সাথে আছে প্রচুর জলীয় অংশ। যাদের স্বাস্থ্য একটু বেশি মোটা তারা ওজন কমাতে খেতে পারেন বেগুন ওজন কমাতে বেগুন খুব ভাল একটি সবজি।
আরও জানুন 👇
ডিমের পুষ্টিগুন ও ডিমের উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও জামের পুষ্টি উপাদান
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা । ঘরে বসেই কিসমিস তৈরির নিয়ম
তেলের উৎপন্ন ও প্রকারভেদ এবং তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা ?
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও জামের পুষ্টি উপাদান
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা । ঘরে বসেই কিসমিস তৈরির নিয়ম
তেলের উৎপন্ন ও প্রকারভেদ এবং তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা ?
বেগুনের পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছেঃ-
- খাদ্যশক্তি - ৪২ কিলো ক্যালোরি
- শর্করা - ২.২ গ্রাম
- প্রটিন - ১.৮ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ২৮ মিলি গ্রাম
- ভিটামিন সি - ৫ মিলিগ্রাম
- আয়রন - ০.৯ গ্রাম
মানব দেহের জন্য প্রতিদিনের খাদ্যচাহিদায় যেসব ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন, তার মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, কপার এবং ভিটামিন বি৬-এর যে চাহিদা, বেগুন থেকেই আমরা তার ৫ শতাংশ পেতে পারি।
বেগুনের উপকারিতা
ক্যানসার
যারা বেগুন খেতে পছন্দ করেন এবং নিয়মিত বেগুন খান, তাদের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় কম থাকে। ক্যানসার প্রতিরোধক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে বেগুনে যা পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
হাড় ও দাতের যত্নে
বেগুনে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। আর এই উপাদানগুলো মানব দেহের হাড় ও দাঁতের জন্য বেশ উপকারী। ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম দাঁতের গঠনকে করে দৃঢ় ও মাড়িকে করে তোলে আরও শক্তিশালী । হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধিতেও কার্য্যকরি ভূমিকা রাখে এই বেগুন।
চোখের যত্নে
বেগুনে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’। আর এই ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন ‘এ’ চোখের যাবতীয় রোগের প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বাড়াতে সাহায্য করে।
রক্ত
বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘কে’ এবং ‘ই’। এটি শরীরের ভেতর রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দিয়ে থাকে। ফলে মানব দেহের রক্ত চলাচলের কার্যক্রমকে সচল রাখতে সাহায্য করে। এবং বেগুনে থাকা আয়রন শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। যারা রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগী তারা খেতে পারেন এই বেগুন। দেহের পুষ্টি পূরণ হবে এবং রক্ত স্বল্পতাও দূর করবে।
ডায়রিয়া
ডায়রিয়া হলে শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দেয়। জিংকের ঘাটতি দূর করার সবচেয়ে ভালো সবজি গুলোর মধ্যে বেগুনও বেশ ভাল একটি সবজি। কিন্তু ডায়রিয়া হলে বেগুন খাওয়া যাবেনা। বেগুন ডায়রিয়া প্রতিরোধি একটি সবজি। ডায়রিয়া সেরে গেলে এই জিংকের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন বেগুন খেয়ে।
মুখের সাদে ও যত্নে
মুখ ও ঠোঁটের কোণে কিংবা জিবেতে ঘা হইয়ে থাকে অনেকের। এই রোগটি সাধারণত রিবোফ্ল্যাবিনের অভাবে হয়ে থাকে। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমানে রিবোফ্ল্যাবিন যা মুখ,ঠোট ও জিবেতে নিয়মিত বেগুন খেলে এ সমস্যা এড়ানো যায়।
জ্বর হওয়ার পর মুখের বিস্বাদও দূর করে বেগুন। তাই জ্বরের পর বেগুনের তরকারি খেলে মুখের স্বাদ ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
খাবার হজমে
বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ডায়াটারি ফাইবার। যা খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে । যাদের রক্তে খারাপ ধরনের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে , তাদের জন্য বেগুন ভালো একটি সবজি বেশ উপকারি । বেগুন ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন 👇
বেগুন সবজি সূস্বাদু এবং বেগুনে অনেক পুষ্টিগুণ থাকলেও নিয়মিত বেগুন খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যাজমা ও অ্যালার্জি আছে, যাদের গেঁটে বাত আছে এবং যাদের ব্রণ অথবা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে, তাদের চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করে তবেই খাদ্যতালিকায় বেগুন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া - প্রথম আলো
0 Comments