চিত্রসূত্র - Photo by Riki Risnandar from Pexels |
প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে খেজুরের চাষ হয়ে আসছে । প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জনসাধারণের কাছে এই খেজুর, প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই ।
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের যে চাহিদা থাকে তার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে থাকে এই খেজুর । তাই প্রতিদিন খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার। পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের যে আয়রন প্রয়োজন তার অনেকটাই খেজুর থেকে পাওয়া যায়। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুরকে ডায়েটে রাখতে বলেন পুষ্টিবিদ বিশেষজ্ঞরা ।
খেজুরের নামকরণ
খেজুর গাছের দ্বিপদ নামের প্রজাতিক অংশ dactylifera এর অর্থ "খেজুর বহনকারী"। নামটি প্রথম অংশ প্রাচীন গ্রীক ভাষা dáktulos থেকে এসেছে যার অর্থ "খেজুর" (এর আরেক অর্থ "আঙুল")। আর পরবর্তী অংশ ferō এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে যার অর্থ "আমি বহন করি"। খেজুর গাছের ফল খেজুর নামে পরিচিত।
খেজুর চাষের ইতিহাস
খেজুরের চাষাবাদ কিংবা খেজুর গাছের উৎপত্তি কোথায় এই বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য খুজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় যে, পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোয় সর্বপ্রথম এই খেজুর চাষ শুরু হয়েছিল।
সম্ভবত - প্রাচীনকাল থেকেই মেসোপটেমিয়া থেকে প্রাগৈতিহাসিক মিশরের অধিবাসীরা খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর থেকে এ গাছের গুণাগুন সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা খেজুর ফল থেকে মদজাতীয় পানীয় প্রস্তুত করে ফসলের সময় তা পান করতো।
খ্রিস্ট-পূর্ব ৬০০০ বছর আগেকার সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে দেখা যায় যে, পূর্বাঞ্চলীয় আরবেও এর চাষাবাদ হতো।
প্রস্তর যুগে পশ্চিম পাকিস্তানের মেরগড় এলাকায়ও খেজুরের চাষাবাদ সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে লিপিবদ্ধ আছে। দক্ষিণ এশিয়ার সভ্যতা হিসেবে বিবেচিত হরপ্পা এলাকার কথা উল্লেখ আছে খ্রিস্ট-পূর্ব ২৬০০ থেকে খ্রিস্ট-পূর্ব ১৯০০ বছর পর্যন্ত।
আরও জানুন 👇
ডিমের পুষ্টিগুন ও ডিমের উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও জামের পুষ্টি উপাদান
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা । ঘরে বসেই কিসমিস তৈরির নিয়ম
তেলের উৎপন্ন ও প্রকারভেদ এবং তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা ?
খেজুরের পুষ্টি উপাদান
খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুর ফল শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করতে বেশ কার্য্যকরি ভূমিকা পালন করে। আরও রয়েছে খনিজ, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম ।
খেজুরে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি। এই ভিটামিন বি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়ক। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয়, চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।
খেজুরের উপকারিতা
ডায়েট
খেজুরে যে ফাইবার আছে এই ফাইবার ডায়েটে বেশ কার্য্যকর ভূমিকা রাখে ।
উচ্চ রক্তচাপ
প্রতিটি খেজুরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বেশ সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতা
যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন ওই সকল রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে খেজুর।
কোষ্ঠকাঠিন্যে
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা রাতে ১/২ টি খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সকালে ভেজানো খেজুর পানিসহ পান করুন। আল্লাহর রহমতে কোষ্ঠকাঠিন্যে নির্মুল হয়ে যাবে ।
হৃদরোগ প্রতিরোধ
খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম যা বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগ প্রতিরোধ করে থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। গবেষকদের নানান গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর মানব শরীরের বিভিন্ন খারাপ ধরণের কোলেস্টেরল কমায় এবং ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন 👇
ওজন হ্রাস
মাত্র কয়েকটা খেজুর কমিয়ে দিতে পারে ক্ষুধার জ্বালা। এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। মাত্র কয়েকটা খেজুরই পারে শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করতে ।
খেজুরের পুষ্টিগুন সম্পর্কে তো জানলেন, তাই শুধু রমজান মাসেই নয়, আমাদের খেজুর খাওয়া উচিত সারাবছর, এবং প্রতিদিন ।খেজুর আমাদের শরিরকে চাঙ্গা রাখতে বেশ কার্য্যিকর ভুমিকা রাখে ।
0 Comments