Auto Ads 1

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও জামের পুষ্টি উপাদান

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও জামের পুষ্টি উপাদান

আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন ধরনের রসালো ও পুষ্টিগুনে ভরপুর মিষ্টি ফল পাওয়া যায়। বিভিন্ন ফলে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টিগুণ। ফল আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মানব দেহের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরে শক্তি জোগান দেই। এ ছাড়া প্রায় সব ফলেই পানি থাকায় এই ফলগুলো আমাদের শরীরের পানিশুন্যতাও দূর করতে সাহায্য বেশ কার্য্যকরি ভূমিকা রাখে।

আমাদের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে জাম পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। এ ফলটিতে রয়েছে খাদ্য শক্তি, আঁশ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, শর্করা, ক্যারোটিন, চর্বি, আমিষ ও ভিটামিন-সির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। এই ফলটি ত্বক টান টান করতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ফলটির রয়েছে অনেক রকমের গুণাবলি যা মানব দেহের কার্য্যক্ষম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

জাম ফলের বিভিন্ন নাম

জাম (ইংরেজি: Java plum, Jambul, Malabar plum), বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini, Myrtaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল। জাম নানা দেশে নানা নামে পরিচিত, যেমন- জাম্বুল, জাম্ভুল, জাম্বু, জাম্বুলা, জাভা প্লাম, জামুন, কালোজাম, জামব্লাং, জাম্বোলান, কালো প্লাম, ড্যামসন প্লাম, ডুহাট প্লাম, জাম্বোলান প্লাম, পর্তুগিজ প্লাম ইত্যাদি। তেলুগু ভাষায় একে বলা হয় নেরেদু পান্ডু, মালায়ালাম ভাষায় নাভাল পাজহাম, তামিল ভাষায় নাভা পাজহাম এবং কানাড়া ভাষায় নেরালে হান্নু। ফিলিপাইনে একে বলা হয় ডুহাট।

জামের পুষ্টি উপাদান

  • আমিষ রয়েছে - ৯.১ %
  • স্নেহ রয়েছে - ৪.৩ %
  • আঁশ রয়েছে -  ১৭.০ %
  • ছাই রয়েছে - ৭ %
  • ক্যালসিয়াম রয়েছে - ১.৩ %
  • ফসফরাস রয়েছে - ০.১৯ %

জাম ফলের নানান ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানুন

জামের প্রধান ব্যবহার খাদ্য হিসেবে। টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। কবিরাজী বা হেকিমী চিকিৎসায় এর কিছু ব্যবহার আছে; বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন-এ জামের ব্যবহার হয়ে আসছে। জামের বীজ দিয়ে নানান রোগের আয়ুর্বেদী চিকিৎসা করা হয়, যেমন বহুমুত্র। ইউনানী এবং চৈনিক চিকিৎসাতেও এর ব্যবহার আছে। হজমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মাড়ির প্রদাহ ইত্যাদি রোগে জামের বীজ, ছাল ও পাতা ব্যবহৃত হয়। জাম থেকে মদ ও সিরকা তৈরি করা যায়। জামে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি আছে ।


জাম ফল খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে নিচে দেয়া হলো

রক্ত পরিস্কার রাখতে

জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আর আয়রন থাকার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায়। ফলে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুবই ভালো।

চোখের যত্নে

জামে ভিটামিন 'এ' আর 'সি' আছে। এছাড়াও এতে থাকে বিভিন্ন মিনারেল, যা আমাদের চোখ এবং ত্বকের জন্য খুব উপকারী। 

ত্বকের সমস্যা

যাদের ত্বকের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত জাম খেলে ত্বকের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে । এই ফল ত্বক টান টান করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া জাম খেলে ত্বকের ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদির সমস্যা দূর করে এবং ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল ও লাবন্যময়।

হজমের সমস্যা

জাম খেলে পেট ঠান্ডা হয়, ফলে দ্রুত হজম হয়ে যায়। যাদের অম্বলের সমস্যা আছে, তারা বেশি করে জাম খেলে উপকার পাবেন।

খাবার খাওয়ার পর অনেকেই হজমজনিত নানা সমস্যায় ভুগে থাকেন। হজমের সমস্যার সমাধানে জাম অনেক উপকারী একটি ফল। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, জাম হজমশক্ত্র কার্য্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডায়েটারি ফাইবারের অন্যতম কার্যকরী উৎস হওয়ার কারণে জাম ফল নিয়মিত খাওয়ার ফলে যেমন হজমশক্তি বাড়ে তেমনি হজমসংক্রান্ত নানান সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া জাম ফল লিভারকে ভালো রাখতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

জামে ফসফরাস ও পটাশিয়ামজাতীয় খনিজ থাকার কারণে এই ফল হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে বেশ কার্য্যকরি । একারণে জামের মৌসুমে নিয়মিত এই ফলটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

রোগ প্রতিরোধ

জাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। জাম ফলে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬ ও ভিটামিন সি রয়েছে যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্য্যকরি ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া জামের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি শরীরের ভেতরের এবং বাইরের সংক্রমণকেও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

দাঁতে এবং হাড়ের জন্য উপকারী

জাম ফল দাঁত এবং হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে। জাম ফলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও আয়রন থাকার কারণে এই ফল দাঁত ও হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। দুধের সঙ্গে জামের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায় ।

ডায়াবেটিস রোগে উপকারি

জামে কম গ্লাইসেমিক সূচক থাকার কারণে এই ফলটি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী এই জাম। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ঘন ঘন তৃষ্ণা ও প্রস্রাব এবং দুর্বলতা সমস্য কমাতেও সাহায্য এই ফলটি।

জাম ফলের সংক্ষিপ্ত বিবরন

আমাদের দেশে জামের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। ফলের আকার অনুযায়ী দুই জাতের জাম পাওয়া যায়। জাত দুটি হলো খুদি জাত- খুব ছোট এবং মহিষে জাত- বেশ বড় ও মিষ্টি।

সব ধরনের মাটিতে জাম চাষ করা যায়। উচ্চফলনের জন্য সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ মাটি প্রয়োজন। লবণাক্ততা এবং জলমগ্ন জায়গায়ও জাম ভালোভাবে উৎপাদিত হয়। জাম রোপণ সময় মধ্য জ্যৈষ্ঠ-মধ্য ভাদ্র (জুন-আগস্ট)। বীজ এবং অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা যায়। বীজে কোনো সুপ্তাবস্থা নেই। টাটকা বীজ বপন করতে হবে। যা ১০-১৫ দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়। গাছ থেকে গাছ ১০ মি. এবং সারি থেকে সারি ১০ মি. দূরত্বে রোপণ করতে হবে এবং গর্ত বা পিটের আকার হবে ১x১x১ মি.।

নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি ফল জাম। এ ফল এখন চলে গেছে দামি ফলের তালিকায়। এক সময় প্রচুর জাম গাছ চোখে পড়লেও এখন তেমন দেখা যায় না। অত্যন্ত ঔষধি গুণসম্পন্ন পাকা জামের মধুর রসে এখন আর মুখ আগের মতো রঙিন হয় না। পতিত জায়গাগুলোতে জামের চারা রোপণ করে একদিকে যেমন আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।

জাম খাওয়ার সতর্কতা

আধাপাকা (ডাঁসা) জাম খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে জাম খাবেন না এবং জাম খাওয়ার পর দুধ খাবেন না। পাকা ফল ভরা পেটে খেলে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকভাব হতে পারে।


তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া -  যুগান্তর

চিত্রসূত্র - pexels

Post a Comment

0 Comments

Ads 4