এই পোস্টের সূচিপত্র
👉 লাউ এর পুষ্টি উপাদান👉 লাউ এর উপকারিতা
👉 লাউ চাষের নিয়ম
👉 বাড়ির ছাদে লাউ চাষ করার সহজ নিয়ম
👉 টবে বা ড্রামে লাউ গাছের পরিচর্যা
লাউ বা কদু (বৈজ্ঞানিক নাম: Lagenaria siceraria) শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। লাউ এক প্রকার লতানো উদ্ভিদ যা এর ফলের জন্যে চাষ করা হয়, যা কিনা কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, আর পরিপক্ব অবস্থায় শুকিয়ে এটি বোতল, পাত্র বা নল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই লাউ এর ইংরেজি নাম হয়েছে Bottle gourd।
কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস। লাউ পৃথিবীর অন্যতম পুরনো চাষ হওয়া সবজি, এর জন্ম আফ্রিকায়। লাউ একটি ধ্বনি পরিবর্তিত শব্দ, যার মূল শব্দ 'অলাবু'। লাউকে কোন কোন স্থানে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়। কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস। এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু লাউ নয়, লাউয়ের বাকল, লতা, এমনকি পাতাও খাওয়া যায়।
শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে লাউ অন্যতম। এর খোল দিয়ে যেমন বাদ্যযন্ত্র তৈরি হয়, তেমনি লাউ নিয়ে বাঁধা গানও লোকমুখে ফেরে এখনো।
আরও জানুন -
মধু খাওয়ার নিয়ম এবং মধুর অসাধারণ গুনাগুন
তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও লেবুর পুষ্টিগুন
গরম পানি খাওয়ার নিয়ম ও গরম পানির উপকারিতা
লাল চা খাওয়ার নিয়ম ও লাল চায়ের উপকারীতা
বৃষ্টির পানির উপকার ও ব্যবহারের নিয়ম
দাতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকামাইগ্রেন কি কেনো হয় এবং হলে করনীয় কি
লাউ রান্নার প্রকারভেদ
চিংড়ি দিয়ে লাউ বেশ সুস্বাধু। ডাল দিয়েও খাওয়া যায় এই সবজি। আবার অনেকে টাকি মাছ দিয়ে খান। লাউয়ের ছিলাও শুঁটকি দিয়ে খাওয়া যায়। যেভাবেই খান না কেন, লাউ শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
পুষ্টিগুণের কথাও জেনে নিন আজ। লাউয়ের মধ্যে এমন কী আছে, যেটি শরীরের জন্য উপকারী?
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি ও পথ্যবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ তিনি বলেন, লাউয়ে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি-সহ আছে ফলিক অ্যাসিড, ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড।
লাউ এর পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে রয়েছে ।
- জলীয় অংশের পরিমাণ ৯৬ দশমিক ১০ গ্রাম,
- আঁশ শূন্য দশমিক ৬ গ্রাম,
- আমিষ শূন্য দশমিক ২ গ্রাম,
- চর্বি শূন্য দশমিক ১ গ্রাম,
- শর্করা ২ দশমিক ৫ গ্রাম এবং খাদ্যশক্তি ১২ কিলোক্যালরি।
আপনি যতই লাউই খান না কেনো আপনার কিন্তু মুটিয়ে যাওয়ার কোণো আশঙ্কা নেই। তবে যাঁদের অল্পতেই ঠান্ডা লাগে, তাঁদের লাউ না খাওয়াই ভালো।
লাউ এর উপকারিতা
নিয়মিত লাউ খেলে শরীরে যে উপকার হয় আর যেসব রোগ এড়ানো যায়, চলুন এবার সেটা জেনে নেওয়া যাক।
- শীতে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় দ্রুত। ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ। নিয়মিত লাউ খেলে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে।
- লাউয়ে প্রচুর পানি থাকায় দেহের পানির পরিমাণে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।
- ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা রোধেও এটি কার্যকর। কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে লাউ। এ ছাড়া প্রস্রাবের সংক্রমণ রোধেও এটি অনন্য।
- উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছেন যেসব রোগী, লাউ তাঁদের জন্য আদর্শ সবজি।
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সবজিটি সহায়ক।
- রাতে যাঁদের ভালো ঘুম হয় না, তাঁদের জন্য লাউ বেশ কাজের।
- এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- লাউয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা দেহের ঘামজনিত লবণের ঘাটতি দূর করে।
- দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে।
- ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাউ যথেষ্ট উপকারী।
- চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধে লাউয়ের রয়েছে সহায়ক গুণাবলি।
- লাউয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে, যা হার্টের জন্য উপকারী।
- লাউয়ে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি ও প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
- লাউয়ে রয়েছে দ্রবণীয়, অদ্রবণীয় ফাইবার ও পানি। দ্রবণীয় ফাইবার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে।
- লাউ পাতার তরকারি মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখে, ঘুমে সমস্যার সমাধান করে ও দেহের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।
- ইউরিন ইনফেকশনে বেশ কার্য্যকরি এই লাউ।
আরও জানুন -
মধু খাওয়ার নিয়ম এবং মধুর অসাধারণ গুনাগুনলাউ চাষের নিয়ম
লাউয়ের চারা তৈরির পদ্ধতি
ছোট ছোট পলিথিন ব্যাগে ১ ভাগ পচা গোবর, ১ ভাগ দোঁআশ মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে হালকা ইউরিয়া মিশ্রিত পানি দিয়ে পাঁচদিন রেখে দিতে হবে। এরপর প্রতি পলিথিনে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের আগে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
লাউ চাষ প্রণালি
বাড়ির ছাদে লাউ চাষ করার সহজ নিয়ম
একটি হাফ ড্রামে তিনটি ছিদ্র করতে হবে ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি করে। তারপর ছিদ্রের ওপর ইটের সুরকি বসাতে হবে।
লাউ প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। প্রধানত দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম।
কিন্তু টব বা ছাদ বাগানে লাউ চাষের দোআঁশ কিংবা বেলে-দোআঁশ মাটি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু বেলে-দোআঁশ মাটি ব্যবহার করলে মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ একটু বেশি দিতে হবে।
- ২ ভাগ বেলে দো-আঁশ মাটির সঙ্গে ১ ভাগ গোবর,
- শূন্য দশমিক ৫ কেজি সরিষার খৈল,
- ৫ কেজি কচুরিপানা পচা,
- ৫০ গ্রাম টিএসপি,
- ২৫ গ্রাম ইউরিয়া
একসঙ্গে মিশিয়ে সাতদিন রাখতে হবে। তারপর চারা রোপণ করতে হবে।
লাউ গাছ যাতে ঠিকমতো বাইতে পারে সে জন্য একটি মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কেউ লাউ ছাদের মেঝেতে শুইয়ে দিতে চায় তাহলে নারকেলের ছোবড়া বিছিয়ে তার ওপর শুইয়ে দিতে পারেন। লাউ পানিপ্রিয় গাছ। মাছ-মাংস ধোয়া পানি মাঝে মধ্যে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
এ ছাড়াও প্রতিদিন সকাল-বিকালে পানি দিতে হবে। কারণ ছাদের গাছে পানি একটু বেশি প্রয়োজন হয়। প্রতিটি হাফ ড্রামে একটি করে চারা রোপণ করা যাবে।
লাউয়ের ভালো জাতগুলোর মধ্যে : হাইব্রিড_ মার্টিনা, ডায়না, বর্ষা ও তাফসি। উফশীর মধ্যে_ গ্রিন ডায়মন্ড, বারি লাউ ও ক্ষেত লাউ। এগুলো ছাড়াও বাড়ির ছাদে শিম, পেঁপে, টমেটো, ঢেঁড়শ, পুঁই শাক চাষ করা সম্ভব।
আরও জানুন -
টবে বা ড্রামে লাউ গাছের পরিচর্যা
ছাদ বাগানে টব বা ড্রামে লাগানো লাউ গাছের পানির অভাব হলে ফলন ব্যাহত হয়। টবে বা ড্রামে লাউ চাষ করতে পানি একটু বেশি প্রয়োজন হয়। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ড্রামের মাটি হালকাভাবে খুঁচিয়ে দিতে হবে। লাউ গাছটিতে যাতে পর্যাপ্ত রোদ পায় খেয়াল রাখতে হবে।
যেভাবে অন্যান্য পরিচর্যা করবেন গাছের সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে লাউ গাছ একটু বড় হলে গোড়া থেকে কিছুটা দূরে সামান্য ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে গাছে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর নিয়মিত দিতে হবে ।
0 Comments