পেঁয়াজের ব্যবহার
মানবসভ্যতার ইতিহাসের আদিযুগ থেকেই পেঁয়াজের ব্যবহার শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব খানের সমাজেই বিভিন্ন রান্নায় পিঁয়াজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে কাঁচা , জমানো, আচার , চূর্ণ, কুঁচি, ভাজা, এবং শুকনো করা পিঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। শুধু পিঁয়াজ সাধারণত সরাসরি খাওয়া হয়না, বরং পিঁয়াজ কুঁচি বা ফালি করে কাঁচা অবস্থায় সালাদএ , অথবা রান্নাতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পিঁয়াজ বিভিন্ন রকমের হতে পারে - ঝাঁঝালো, মিষ্টি , তিতা।
পেঁয়াজেকে ভিনেগার বা সিরকাতে ডুবিয়ে আচার বানানো হয়। দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যে পেঁয়াজ একটি মৌলিক উপকরণ, এবং প্রায় সব রান্নাতেই পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। পেঁয়াজের কোষের আকার বেশ বড় বলে বিজ্ঞান শিক্ষায় মাইক্রোস্কোপের ব্যবহার ও কোষের গড়ন শেখাতে পেঁয়াজের কোষ ব্যবহার করা হয়।
পেঁয়াজের উৎপাদন
বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রধান দেশ হচ্ছে চীন ও ভারত। ভারতে পিঁয়াজ সবথেকে বেশি আসে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে। মহারাষ্ট্র ছাড়া দক্ষিণ ভারত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে পিঁয়াজ বিপুল চাষাবাদ হয়।জরুরি ক্ষেত্রে পাকিস্তান হয়ে ভারতে পিঁয়াজ আমদানি হয় আফগানিস্তান থেকে ।
বাংলাদেশও প্রচুর পরিমানে পিয়াজ উৎপাদন হয় ।
পেঁয়াজ কাটতে গেলে চোখে পানি চলে আসে। তবে এই পেয়াজ যে স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপকারি তা জানলে অবাক হতে পারেন আপনিও। প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের সঙ্গে এতে ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, যা আমাদের শরীরে নানা উপকারে আসে। স্যালাদ থেকে স্যান্ডউইচ, কিংবা শুধু মুড়িতে মেখে যেমন নানা ভাবে পেঁয়াজ খাওয়া যায়, তেমনই এর রয়েছে নানাবিধ গুণ। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে একবার দেখে নিন পেঁয়াজের গুণাগুণ সম্পর্কে ।
পেঁয়াজের পুষ্টি উপাদান
পেঁয়াজে আছে
- ভিটামিন বি১ (থায়ামিন),
- বি২ (রিবোফ্লাবিন),
- বি৩ (নিয়াসিন),
- বি৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড),
- বি৬, বি৯ (ফোলেট) ও ভিটামিন সি।
আরও আছে
বিভিন্ন ভিটামিন সহ, মিনারেল, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সালফার, ভিটামিন B এবং C এর পাশাপাশি পেয়াজে রয়েছে ।
কার্মিনেটিভ, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় পদার্থ মজুত রয়েছে। তাই শরীরে কোথাও সংক্রমণ ঘটে থাকলে কাঁচা পেঁয়াজ একটু বেশি খান, চটজলদি উপকার পাবেন।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে পেঁয়াজের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো পেঁয়াজ সেই ৫০০০ বিসি থেকেই নানাভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
ইতিহাসের পাতা ঘাটলে জানা যায়, পেঁয়াজের চাষ প্রথম শুরু হয় চীনে। তারপর মিশর হয়ে তা বিশ্বের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আর এখন তো প্রায় সারাবিশ্বেই পেঁয়াজের রমরমা। খাবার থেকে ওষুধ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সবজিটি বিপুল জনপ্রিয়তা পয়েছে। কিন্তু পিঁয়াজের এত জনপ্রিয়তার পিছনে কারণটা কী? আসলে এই সবজিটি কাঁচা অবস্থায় হোক, কী রান্নায় দিয়ে, নিয়মিত খেলে একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নেয়া যাক পেঁয়াজের স্বাস্থ্য উপাকারিতা সম্পর্কে
আরও জানুন -
মধু খাওয়ার নিয়ম এবং মধুর অসাধারণ গুনাগুন
তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও লেবুর পুষ্টিগুন
গরম পানি খাওয়ার নিয়ম ও গরম পানির উপকারিতা
লাল চা খাওয়ার নিয়ম ও লাল চায়ের উপকারীতা
বৃষ্টির পানির উপকার ও ব্যবহারের নিয়ম
দাতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকামাইগ্রেন কি কেনো হয় এবং হলে করনীয় কি
ক্যান্সারকে রুখতে পেঁয়াজের রয়েছে বিশেষ পুষ্টি
ক্যান্সার বিরোধী ব্রেন, কোলোন এবং ঘারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যতে এসে দাঁড়ায় যদি প্রতিদিন পেঁয়াজ খাওয়া যায়। কারণ এই সবজিটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরের অন্দরে ক্যান্সার কোষের জন্ম হতে দেয় না। ফলে এমন ধরনের মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
হার্টের সমস্যা
যাদের কার্ডিভাসকুলার ফাংশনে সমস্যা আছে, তাঁরা প্রতিদিন দুই চা–চামচ পেঁয়াজের রস খেলে সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটবেন, আর নিয়মিত খেলে হার্টের সমস্যা হবে না। হার্টের সমস্যায় প্রতিদিন খাবারের আগে সালাদ খাওয়া উত্তম অভ্যাস, এই সালাদ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি ।
অ্যাজমার সমস্যা সমাধানে পেঁয়াজ
যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাঁরা নিয়মিত দুবেলা এক চা–চামচ করে পেঁয়াজের রস খেলে অ্যাজমার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। বিশেষ করে রাতে শোবার আগে এক কাপ গরম পানিতে এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদের গুঁড়া, এক চা–চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমাজনিত সমস্যার উপকার পাবেন।
স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাই পেঁয়াজ
স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে পেঁয়াজে উপস্থিত ফ্লেবোনেয়েড হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে সবজিটির অন্দরে থাকা অর্গেনোসালফার নামক উপাদান হার্ট অ্যাটাকের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেঁয়াজ
ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে একেবারে ঠিক শুনেছেন! ২১ শতকের সব থেকে ভয়ঙ্কর এই রোগকে দাবিয়ে রাখতে পেঁয়াজের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপদান রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের ঘাটতি যাতে দেখা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগই থাকে না।
ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে পেঁয়াজ
ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো করে অতিরিক্ত চুল পরার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে পেঁয়াজের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। তাই যাদি চান বয়স বাড়লেও ত্বকের উপর তার প্রভাব না পরুক, তাহলে নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
খাবার হজমে পেঁয়াজের গুন
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় পেঁয়াজে থাকা ইনুলিন নামক একটি উপাদান দেহের অন্দরে হজমে সহায়ক উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যা বাড়ায়। ফলে হজম ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও হ্রাস পায়।
নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজ
গ্রীষ্মে বা শীতে অনেকের নাক থেকে রক্তপাত হয়। যদি এ সময়ে কাছাকাছি পেঁয়াজ থাকে তাড়াতাড়ি কেটে তার ঘ্রাণ নিতে থাকুন। রক্তপাত কমে যাবে বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
মানব দেহের হাড় ভালো রাখে পেঁয়াজ
হাড় ভালো রাখে- হাড়ের কঠিন ব্যারাম অ্যাথেরসক্লেরোসিস এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের সঙ্গে লড়ে। তার সঙ্গে দেহে খারাপ কোলেস্ট্রল কমায়। যার ফলে আপনার হার্ট সুস্থ থাকে।
প্রস্রাব ধারণক্ষমতা বাড়াতে পেঁয়াজের গুন
প্রস্রাবের বেগ হলে আর দাঁড়ানো যায় না, দেরি হলে বেসামাল হয়ে কয়েক ফোঁটা বেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ১ চা–চামচ পেঁয়াজের রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে রাতে শোবার আগে খেতে হবে। ৪ সপ্তাহ খেলে প্রস্রাবের ধারণক্ষমতা বাড়বে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
মুখের দুর্গন্ধ সারাতে পেঁয়াজ
মুখের গন্ধ দূর করে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে মুখ গহ্বরের উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলো মরতে শুরু করে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। সেই সঙ্গে মাড়িতে নানাবিধ রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
প্রচন্ড গরমের দিনে পেঁয়াজের গুন
অত্যধিক গরমে: প্রচণ্ড গরমে পিপাসা পেলে হঠাৎ পানি পান করলে সর্দি হয়। এ সময় খাবার অথবা সালাদের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে পিপাসা কম লাগবে এবং পথেঘাটে হিটস্ট্রোকের ভয় থাকে না।
কাচা পেঁয়াজ খেলে কি ক্ষতি হতে পারে?
আসলে অনেকেই বলে থাকেন কাচা পেঁয়াজে ক্ষতি আছে এই ধারনাটা সম্পুর্ন ভুল । কাচা পেঁয়াজেই রয়েছে পেঁয়াজের আসল পুষ্টিগুন ।
পেঁয়াজ দিয়ে আপনি উপকার পেতে হলে কাঁচা খাওয়াই জরুরি, অথবা রস করে খেতে পারেন। আমরা সাধারণত রান্নায় যে পেঁয়াজ খাই, তা দিয়ে উপকার হলেও ঔষধি গুণের উপকার পাওয়া যাবে না। তাই প্রতিদিন পেঁয়াজসহ সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে শরীর সুস্থতা থাকবে, কোনো রোগে আক্রান্ত থাকলে সেটাও নিরাময় হবে।
রিসোর্স --- বোল্ডস্কাই ও খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ
0 Comments