পালং শাক ( বৈজ্ঞানিক নাম:Spinacia oleracea) এমারান্থাসি পরিবারভুক্ত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি জনপ্রিয় শাক ও সবজি। এর আদিবাস মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। এটি একবর্ষজীবি উদ্ভিদ, তবে দ্বিবর্ষজীবি পালং গাছ হতে পারে যদিও বিরল। পালং গাছ ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।
বাংলাদেশে শীতকালে পালং শাকের চাষ হয়। এর পাতা একান্তর, সরল, ডিম্বাকার বা ত্রিভূজাকার। এই পাতার আকার ২-৩০ সেমি লম্বা ও ১-১৫ সেমি চওড়া হতে পারে। গাছের গোড়ার দিকের পাতাগুলো বড় বড় এবং উপরের দিকের পাতাগুলো ছোট হয়। এর ফুল হলদেটে সাদা, ৩-৪ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট হয়। এর ফল ছোট, শক্ত, দানাকৃতির ও গুচ্ছাকার। ফলের আকার আড়াআড়ি ৫-১০ মিমি; এতে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে।
পালং শাকের বর্ণনার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে চীনে। সেখানে বলা হয়েছে, এই শাক নেপাল থেকে চীনে এসেছে (সম্ভবতঃ ৬৪৭ খৃষ্টাব্দের দিকে ।
পালং আমাদের দেশে একটি পরিচিত শাক। এটি ভাজি কিংবা ঝোল রান্না করে খাওয়া যায়। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি যা আমাদের শরীরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। নানারকম অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকতে খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন এই সবুজ শাকটি।
এতে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাজা এবং অল্পসেদ্ধ করে খেলে বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট লাভ করা যায়। ভিটামিন-বি৯ ১৯৪১ সালে প্রথম পালং শাকে আবিষ্কৃত হয়েছিল
পালং শাকের পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে থাকে –- ভিটামিন এ – ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম,
- ভিটামিন সি – ২৮ মিলিগ্রাম,
- ক্যালসিয়াম – ৯৯ মিলিগ্রাম,
- আঁশ – ০.৭ গ্রাম,
- খাদ্যশক্তি – ২৩ কিলোক্যালরি,
- কার্বোহাইট্রেড – ৩.৬ গ্রাম,
- শর্করা – ০.৪ গ্রাম,
- প্রোটিন – ২.২ গ্রাম,
- নিকোটিনিক অ্যাসিড – ০.৫ মিলিগ্রাম,
- রাইবোফ্লোবিন – ০.০৮ মিলিগ্রাম,
- থায়ামিন – ০.০৩ মিলিগ্রাম,
- অক্সালিক অ্যাসিড – ৬৫২ মিলিগ্রাম,
- ফসফরাস – ২০.৩ মিলিগ্রাম,
- আয়রন – ১১.২ মিলিগ্রাম,
- বিটাকেরোটিন।
- লিউটিন – ৫৬২৬ মাইক্রোগ্রাম,
- ফোলেট – (বি৯) ১৯৬ মাইক্রোগ্রাম,
- ভিটামিন কে – ৪৬৩ মাইক্রোগ্রাম,
- পটাশিয়াম – ২০৮ মিলিগ্রাম,
- ফ্ল্যাভোনয়েড – ১০ রকমেরও বেশি ধরনের,
আরও জানুন -
কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা ও কলমিশাকের ওষুধি গুনাগুন
জলপাই এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুন
লাল শাকের উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
কলার উপকারিতা পুষ্টি উপাদান ও চাষ পদ্ধতি
কালোজিরার উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান
কুল খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন ও বরই পাতার গুনাগুন এবং ব্যবহারবিধি
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়
পালং শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীরা এই শাক পরিমাণমতো খেলে উপকার পান। এই শাকের বীজও খুব উপকারী। এর বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায়। পালং শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও ভালো কাজ দেয়। পালং শাক শরীর ঠান্ডা রাখে।
পালং শাকের উপকারিতা
- পালং শাকে আছে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- এতে থাকা বেশি মাত্রার ভিটামিন এ, লিম্ফোসাইট বা রক্তের শ্বেত কণিকা দেহকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে।
- এতে থাকা ১০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- এর উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- এর ভিটামিন 'এ' ত্বকের বাইরের স্তরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- এতে ফলিক এসিড থাকায় তা হৃদ যন্ত্রের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে সক্ষম।
- প্রাপ্ত বয়স্ক ঘন সবুজ পালং পাতায় উচ্চ মাত্রায় ক্লোরোফিল থাকায় এতে ক্যারটিনয়েড বিদ্যমান আর তা আমাদের শরীরে ব্যাথা নাশক ও ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
- অনেকের মেদবৃদ্ধি ও দুর্বলতায় হাঁফ ধরে, তারা পালং পাতার রস খেলে উপকার পাবেন। পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য পালং শাক বিশেষ উপকারী। এই শাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য।
- চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং মুখের লাবণ্য বৃদ্ধি করে।
- পোড়া ঘায়ে, ক্ষতস্থানে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
- পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন ‘সি’ থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে । রক্ত বৃদ্ধিও করে।
- পালং শাক দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পালং শাক খুব উপকারী।
বয়সের ছাপ কমাতে পালং শাক
বয়সের ছাপ লুকানোর জন্য আমরা কতকিছুই না করি। মুখে দামি ক্রিম মাখা থেকে শুরু করে শাক-সবজির ন্যাচারাল ট্রিটমেন্টও নিচ্ছে অনেকে। অথচ শীতের সবজি পালং শাকেই আছে এন্টি-অক্সিডেন্ট। আর এন্টি-অক্সিডেন্টের কাজই হলো কোষের ক্ষয়রোধ করে শরীরকে তারুণ্যদীপ্ত এবং সুস্থ-সবল রাখা। অর্থাৎ বার্ধক্যকে জয় করতে পালং শাকের রয়েছে অনন্য ভূমিকা।
এছাড়া সহজলভ্য এ শাকটির রয়েছে অনেক খাদ্যগুণ। ভিটামিন 'ডি' ছাড়া বাকি সব ভিটামিনই এতে রয়েছে। বিশেষ করে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন 'ই' এবং ভিটামিন 'সি'র উৎস পালং শাক। প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রনসহ বেশকিছু প্রয়োজনীয় মিনারেল রয়েছে এতে।
পালং শাকের এন্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কেও কোষগুলোকেও সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখে। তাই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। তাছাড়া পালং শাকের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। সব মিলিয়ে পালং শাক শীতের এক অসাধারণ সবজি!
যৌবন ধরে রাখতে
পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যন্টিঅক্সিডেন্টের কাজই হল কোষের ক্ষয়রোধ করে শরীরকে তারুণ্যদীপ্ত রাখা। সুস্থসবল সতেজ রাখা।
ব্রণের সমস্যা এবং সমাধান
ব্রণের সমস্যায় পালং শাকের প্যাক উপকারী। কিছুটা পালং শাক নিয়ে তার সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিতে হবে। তা ভাল করে মুখে লাগিয়ে কমপক্ষে ২০ মিনিট রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতি প্রতিদিন করলে ভেতরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যাবে। সঙ্গে সিবামের উৎপাদনও কমবে। স্বাভাবিকভাবেই ব্রণের সমস্যা কমবে। নিয়মিত পালং শাকের রসও কিন্তু সমান উপকার দেয়।
আরও পড়ুন -
কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা ও কলমিশাকের ওষুধি গুনাগুন
জলপাই এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুন
লাল শাকের উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
কলার উপকারিতা পুষ্টি উপাদান ও চাষ পদ্ধতি
কালোজিরার উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান
কুল খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন ও বরই পাতার গুনাগুন এবং ব্যবহারবিধি
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়
পালং শাক কেনো খাবো ?
পুষ্টিবিদগণ বলেন, পুষ্টিতে ভরপুর পালং শাক। তাই একে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। পুষ্টিবিদদের মতে, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। তার মধ্যে ভিটামিন এ, বি২, সি, ই, কে, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার ও প্রোটিন এইগুলি তো আছেই।
কী ভাবে খাওয়া যায় পালং শাক?
পালং শাক খাওয়া যায় রান্না করে। তার মধ্যে শাক ভাজা, চচ্চড়ি, ছেঁচকি, পনির দিয়ে সুস্বাদু নানান রেসিপি, মাছ দিয়ে নানান পদ ইত্যাদি তো হয়-ই। তা ছাড়াও সেদ্ধ, সালাড, স্যুপ অথবা জুস করেও খাওয়া যায়।
0 Comments