Auto Ads 1

অভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়া ও আমল



কথায় আছে, অভাবে স্বভাব নষ্ট। কিন্তু অভাব হলেই যে স্বভাব নষ্ট করতে হবে, তা আমাদের ইসলাম ধর্মে কখনই বলে নাই। বরং অনেক অভাব অনটনেও ধৈর্য রেখে নিজেকে সামলে নিতে হবে এবং পরিশ্রম করে যেতে হবে। যতোই প্রতিকূল পরিবেশই আসুক না কেনো, খারাপ কোনো পন্থা অবলম্বন করা উচিৎ নয়।
 
অনেকে আবার অভাবের তাড়ায় অধৈর্য হয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়েন। জীবন হলো নদীর মতো— কখনও অর্থ জোয়ারে ভাসিয়েছে রঙে, কখনও অভাব-অনটনে ডুবিয়েছে অন্ধকারে অতল গহ্বরে। মুমিনদের জন্য জীবন হলো— পরীক্ষা।

আল্লাহপাক আমাদের পরীক্ষা করার জন্যই অভাব দিয়ে থাকে। অভাব-অনটনে আমরা কতটুকু আল্লাহকে মনে করছি, আল্লাহর উপর ভরসা করছি ধৈর্য্যধারন করছি সেটাই মহান আল্লাহতায়ালা দেখতে চান। তাই যতই অভাব-অনটন আসুক না কেনো সমস্ত প্রতিকূলতার ভিতরেও আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। ভরসা রাখতে হবে মহান আল্লাহর উপর ।

আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির করে। যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকন্ঠিত। -(সুরা মাআরিজ আয়াত : ১৯-২০)।

আল্লাহতায়ালা বলেন, 'যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার দয়া না থাকত, (তা হলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে) আর নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তাওবা গ্রহণকারী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নুর আয়াত : ১০)

অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে চাইতে হবে। আর আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রার্থনা ফিরিয়ে দেন না।

আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের রব বলেছেন— ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা অহঙ্কার বশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। -(সুরা গাফির আয়াত: ৬০)।

মহান আল্লাহতাআলা বান্দাকে তার সুন্দর সুন্দর নামের জিকির বা আমল করার কথা বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে আলাদা আলাদাভাবে এ নামের জিকিরের আমল ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে (اَلرَّافِعُ) ‘আর-রাফিয়ু’ একটি। যার অর্থ হলো- ‘মুমিনদের মর্যাদা উঁচুকারী।’
 
সংক্ষেপে গুণবাচক নাম (اَلرَّافِعُ) ‘আর-রাফিয়ু’-এর জিকিরের আমল ও ফজিলত তুলে ধরা হলো-

উচ্চারণ : ‘আর-রাফিয়ু’
অর্থ : ‘মুমিনদের মর্যাদা উঁচুকারী।’

আল্লাহর ‍গুণবাচক নাম (اَلْخَافِضُ)-এর আমল

ফজিলত

যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার এ পবিত্র গুণবাচক নামের জিকির মধ্যরাত বা রাতের দ্বিপ্রহরের পর ১০০ বার পাঠ করে, মহান আল্লাহ তাকে তার সৃষ্টির মধ্যে মনোনীত ও অর্থশালী করেন এবং অন্যের মুক্ষাপেক্ষীতা থেকে মুক্ত রাখেন।
  • যে ব্যক্তি অত্যাচারীর জুলুম অত্যাচার থেকে এ পবিত্র গুণবাচক (اَلرَّافِعُ) ‘আর-রাফিয়ু’ নামটি প্রতিদিন ১০০বার পাঠ করে।
  • অন্যত্র এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এ পবিত্র গুণবাচক (اَلرَّافِعُ) ‘আর-রাফিয়ু’ নামের জিকির প্রতিদিন ঘুমানোর সময় ১০০ বার পড়বে, ঐ ব্যক্তি সকল বিপদাপদ থেকে হিফাজত থাকবে। আর যে ব্যক্তি ৬০০ বার পড়লো সে  অত্যাচারিত থয়া থেকে মুক্তি লাভ করবে।

অভাব মোচনে যে দোয়া পড়ব-


অভাবমুক্ত হতে আল্লাহ তাআলা আমাদের একটি দোয়া শিখিয়েছেন। অভাব মোচনে এ দোয়াটি আমরা বেশি বেশি পাঠ করব। আর তাহলো-

اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ


‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আলাইনা মাইদাতাম মিনাস্সামায়ি তাকুনু লানা ঈদাল্লি আউয়্যালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪)

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক আল্লাহ! তুমি আকাশ থেকে আমাদের জন্য খাবার ভরতি খাঞ্চা অবতীর্ণ কর যেন তা আমাদের প্রথম অংশের জন্য আর আমাদের শেষ অংশের জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়। তুমি আমাদেরকে রিজিক দান কর। প্রকৃতপক্ষে তুমিই উত্তম রিজিকদাতা।’

বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত মাকহুল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো সাতবার বলবে আল্লাহ তাআলা তার সত্তরটি অভাব দূর করবেন। (তন্মধ্যে) সবচেয়ে হাল্কা বিপদ হলো মানুষের অভাব। দোয়াটি হলো-

لاَ حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ، وَلا مَلْجَأَ مِنَ اللهِ إِلاَّ إلَيْهِ

অর্থ : 'আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গোনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নেক আমলে মশগুল হওয়া সম্ভব না। আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তার কাছেই আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

ইস্তেগফারে অভাব মোচন হয়-


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

আসলে আমাদের মাঝে যখন অভাব দেখা দেয় তখন আল্লাহর দিকে ঝুঁকি কিন্তু অভাব দূর হওয়া মাত্রই আল্লাহকে ভুলে যাই আর কৃপণতা দেখাই। এ বিষয়েই আল্লাহ ইরশাদ করেন-

‘মানুষকে দুর্বলমনা করে সৃষ্টি করা হয়েছে। বিপদ স্পর্শ করলে সে ঘাবড়ে যায়। আর স্বাচ্ছন্দ্য আসলে কার্পণ্য শুরু করে।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ১৯-২১)

চাইব কেবল আল্লাহর কাছেই


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভাব ও প্রাচুর্যের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন।’ (আবু দাউদ)

হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয়, তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদ আহমদ)

আত্মীয়র সম্পর্ক বজায় রাখলে অভাব মোচন হয়-


হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

অভাবের পরীক্ষায় বহু মানুষের স্বভাব নষ্ট হয়। প্রত্যেক মুমিনের উচিত ধৈর্যের মাধ্যমে অপেক্ষা করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, 'আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফলফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।-(সুরা বাকারা আয়াত : ১৫৫)।

আরও পড়ূন - সফলতা পাওয়ার জন্য যা প্রয়োজন               

                          ব্যবসায় বরকত লাভের দোয়া

Post a Comment

0 Comments

Ads 4