"মাইগ্রেন" শব্দের উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ (হেমিক্রানিয়া) থেকে, যার অর্থ "মাথার একদিকে ব্যথা"। (হেমি-), "অর্ধেক", এবং (ক্রানিয়া), "খুলি" থেকেই এর সৃষ্টি।
প্যাথোফিজিওলজি
বিশেষজ্ঞদের মতে , মাইগ্রেন একধরনের নিউরোভাস্কুলার ডিজঅর্ডার। কারণ এই সমস্যা মস্তিষ্ক থেকে সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে রক্তশিরায় ছড়িয়ে যায়। কিছু গবেষক ধারণা করেন, নিউরোনাল বিষয়গুলো অধিকতর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে্ আবার কিছু গবেষক মনে করেন রক্তশিরাই মূল প্রভাব ফেলে। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন এই দুই-ই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিউরোট্রান্সমিটার সিরোটনিন-এর উচ্চস্তরসমূহ, যা ৫-হাইড্রোক্সিট্রিপ্টামিন নামেও পরিচিত, এই ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে বলে ধারণা করা হয়।
মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে শুরু হয়ে থাকে । বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১১ শতাংশ বয়স্ক মানুষের মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা সমস্যায় ভুগছেন ।
মাইগ্রেন কী?
মাইগ্রেন হচ্ছে এক ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যে কোনো এক পাশ থেকে মাইগ্রেনের ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় এই ব্যথা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। মাইগ্রেনের যন্ত্রণা খুবই কষ্টদায়ক ও অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে । মাইগ্রেন মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে । মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে, সেগুলো মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়। মাথাব্যথার সঙ্গে রোগির বমি এবং বমি বমি ভাব এমন কি দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে।রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় অন্য সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। মাইগ্রেন একধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা যায় । সাধারনত মাইগ্রেনের ব্যথা চোখের কোনো সমস্যার কারনে হয় না।
মাইগ্রেনের ব্যাথা কেন এবং কাদের বেশি হয়?
মাইগ্রেন কেন হয় তা পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। নারীদের ঋতুস্রাবের সময় মাথাব্যথা বাড়ে, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ সেবনেও মাইগ্রেন বাড়তে দেখা যায়। তবে পুরুষ ও মহিলা সবার ক্ষেত্রেই একই কারনে সমস্যা দেখা দেই যেমন চকলেট, পনির, কফি বেশি খাওয়া, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘসময় কম্পিউটারে কাজ করা, চোখ, কান, নাক ও চোয়ালের জয়েন্টে সমস্যা, ব্রেইন টিউমার, মাইগ্রেন, ঘুম কম হওয়া মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে মস্তিষ্কের পর্দা বা মেনিনজেসে কোনো সমস্যা হলে মাথার হাড়ের মধ্যকার সাইনাসে প্রদাহ (সাইনোসাইটিস) হলে কিংবা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলেও মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
করোনা রোগীও নানা কারণে মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। শরীরে নানা জীবাণুর সংক্রমণেই হতে পারে মাথাব্যথা।
মাইগ্রেনের লক্ষণ
মাইগ্রেনের কারনে মাথায় যে ব্যাথা হয় সেটা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথা, বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তিবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যেকোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুত্রপাত হয়। পরে এই ব্যথা পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে | চোখের পেছনেও ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে|যেসব খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে বেশ সাহায্য করে
- ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক হিসেবে বেশ কার্য্যকরি।
- বিভিন্ন ধরনের ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
- সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় ।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
- আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্চার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। ভাল ফল পাবেন ।
- মাইগ্রেনের সমস্যায় কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন
- আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, , টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না
- গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
- আপেল, কলা ও চিনাবাদাম এবং
- পেঁয়াজ
আরও জানুন - নিউরো মেডিসিন ডাক্তারের তালিকা ও যোগাযোগের ঠিকানা
মাইগ্রেন থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় জানিয়েছেন
- ডাঃ নুজহাত চৌধুরী
- চক্ষু বিশেষজ্ঞ
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
- মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত।
- অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
- কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।
- উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
- বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
- মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।
শীতের সময় ঠাণ্ডার কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে। শীতের সময় ঠাণ্ডা যেন না লাগে সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
সাধারনত মাইগ্রেনের ব্যথা পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এ ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণ মাথাব্যথার মতোই। তাই মাইগ্রেনের ব্যথা কিনা তা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায়। মাথাব্যথা হলে আমরা সাধারণ নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে থাকি। তবে এর আগে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তিনিই সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।
সাধারনত মাইগ্রেনের ব্যথা পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এ ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণ মাথাব্যথার মতোই। তাই মাইগ্রেনের ব্যথা কিনা তা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায়। মাথাব্যথা হলে আমরা সাধারণ নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে থাকি। তবে এর আগে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তিনিই সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।
0 Comments