Benefits of banana Nutrients |
বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা,কুষ্টিয়া, মেহেরপুর,বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, , নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, ঝিনাইদহ, প্রভৃতি এলাকায় শত শত বৎসর ধরে কলার চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে আসছে। বাংলাদেশে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সারা বছর এ দেশের প্রায় সব অঞ্চলের উঁচু জমিতেই এর চাষ হয়ে থাকে। পার্বত্য এলাকায় বাংলাকলা, বনকলা, মামা কলাসহ বিভিন্ন ধরনের বুনোজাতের কলা চাষ করা হয়। কলম্বিয়া , ল্যাটিন আমেরিকান দেশে কলা একটি প্রধান অর্থকরী ফসল। একসময় ভারতীয় অর্থনীতিতেও কলা একটি প্রধান অর্থকরী ফসল হিসাবে চাষাবাদ হতো।
দেহের এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যা রোধে ওষুধের থেকে কলা অনেক কার্যকরী। শুনতে কিছুটা অদ্ভুত হলেও, এটাই সত্য কারন কলাতে রয়েছে প্রোটিন ও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং রয়েছে অন্যান্য পুষ্টিগুণ; কলা খেতেও বেশ মাজাদার। গবেষকগণ সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলেছেন, এই ফলটি নারীদের ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধান করে এবং দেহে শক্তি জোগাতে বেশ কার্য্যকরি। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা বিভিন্ন রোগ থেকে দেহকে রক্ষা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কলা বেশ সহায়ক ।
Benefits of banana Nutrients and cultivation methods
কলার পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় যে পরিমাণ খাদ্যগুণ রয়েছে তা নিম্নরূপঃ- আমিষ ---------------------- ১.২%
- ফ্যাট (চর্বি) ------------------ ০.৩%
- খনিজ লবণ ------------------- ০.৮%
- আঁশ ------------------------- ০.৪%
- শর্করা ------------------------ ৭.২%
- পানি (জল) ------------------ ৭০.১%
খনিজ লবণ এবং ভিটামিন
- আয়রন--------------------- ০.৬মি.গ্রা. ভিটামিন-সি, অল্প ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স----- ৮মি.গ্রা.
- ক্যালসিয়াম----------------------- ৮৫মি.গ্রা.
- ফসফরাস------------------------ ৫০মি.গ্রা.
কলা যেমন পুষ্টিকর, তেমনই সুস্বাদু একটি খাবার। কাঁচাকলা এবং পাকাকলা দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। অনেকে মনে করে থাকেন কলাতে বেশি পরিমান ক্যালোরি থাকায় ডায়েটের জন্য ভালো না,
এই ধারণাটি ভুল। তবে কলা কাঁচা থেকে যখন পাকা শুরু হয় সাথে বদলে যায় তার গুণাগুণ। এজন্য শরীরের প্রয়োজন বুঝে কলা খাওয়া উচিৎ ।
আরোও জানুন - ফুল কপির উপকারিতা ও পুষ্টিগুন এবং ফুলকপি চাষ পদ্ধতি
কাচা কলার উপকারিতা
- কাঁচা অবস্থায় কলা সবুজ থাকে। পাকার সাথে সাথে কলা হলুদ হতে শুরু হয় এবং বদলাতে থাকে তার পুষ্টিগুণ । কলার রং দেখেই বোঝা যায় উপস্থিত উপাদানগুলোর পরিমাণ কেমন ।
- কাচা কলায় রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকার কারনে শর্করার পরিমাণ কম থাকে। ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালশিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাসের মতো উপাদানও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
- পেট খারাপের সমস্যায় ভুগলে কাঁচকলা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। কলা পটাশিয়াম, মিনারেল,ও ভিটামিন সি-তে পরিপূর্ণ।
- কলাতে রয়েছে এমাইনো এসিড, যা মানসিক চাপ রোধক হিসেবে ভালো কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম- যা বিষণ্ণতা রোধে বেশ কার্য্যকরি।
- কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে এবং যেসব রোগী রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এটি বেশ কার্য্যকরি একটি ফল ।
- সন্তানসম্ভবা মহিলাদের জন্য কলা খুবই উপকারী একটি খাবার।সন্তানসম্ভবা নারীরা এসময় কলা খাওয়া জরুরী। কেননা এটি সকালেবেলার দুর্বলতা কাটাতে দারুন কাজ করে এবং রক্তের শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বেশ কার্য্যকরি ভূমিকা পালন করে ।
পাকা কলার পুষ্টিগুন
- কলা পাকার সঙ্গে সঙ্গে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ ও শর্করায় মাত্রা পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই হলুদ কলায় শর্করা মাত্রা বেড়ে যায়। সেই সাথে এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- যে কলা একটু বেশি পাকা শুরু হয় অর্থাৎ খয়েরি ছোপযুক্ত কলায় শর্করার পরিমাণ আরও বেশি থাকে। খয়েরি ছোপ যত বেশি বাড়ে , ততই শর্করা বেশি থাকে ।
- সম্পূর্ণ খয়েরি কলা মানে সেটি অতিরিক্ত পাকা কলা। এতে শর্করা এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, দু’টিই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে।
- কলা শক্তির (এনার্জি) অত্যন্ত ভালো উৎস। এর ফলে অনেক খেলোয়াড়কেই বেশি পরিমাণ কলা খেতে দেখা যায়।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের পাকা কলা খাওয়া উচিত। কলাতে ফাইবার থাকায় পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত একটি করে কলা খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় ।
- কলা দেহের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্য্যকরি ভূমিকা পালন করে।
- কলা পাকস্থলির এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাকস্থলির আলসার রোধে করতে সাহায্য করে ।
- পাকা কলার মধ্যে ছয় ধরনের ভিটামিন রয়েছে, যা রক্তে শর্করা গঠনে কাজ করে থাকে ।
- কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। রোজ সকালে একটি পাকা কলা খেলে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে ।
ডায়াবেটিক সারাতে কলা
ডায়াবেটিক রোগীদের কোনো ফল খেতেই মানা নেই, শুধু পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়। কলার ক্ষেত্রেও একই । যদি কোনও রোগীর ডায়েটে ১০০-১৫০ গ্রাম ফল থাকে, তা হলে তার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০-৭৫ গ্রাম কলা খাওয়া যাবে।কলার নানান উপকারিতা
যাদের ওজন অতিরিক্ত কম, তাদেরও কলা খেতে বলা হয়। কলায় ক্যালরির পরিমাণ অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেকটা বেশি। যাদের ওবেসিটি বা হার্টের কোনও সমস্যা রয়েছে, তাদের ডায়েটে বেশি কার্বোহাইড্রেট রাখা যাবে না। তারাও বিকল্প হিসেবে কলা খেতে পারেন। এছাড়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পাকা কলা খেতে হবে আর পেট খারাপ হলে কাঁচকলা। ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় কলা খেলে ভালো হজম হয়। কলার উচ্চ পটাশিয়াম মাত্রার কারণে শরীরের পটাশিয়ামের অভাব থাকলে বা হাইপোক্যালেমিয়ায় ভুগলে নিয়মিত কলা খেতে হবে।
কখন, কীভাবে খাবেন
ভারী খাবারের সঙ্গে কলা না খাওয়াই ভাল। খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে কলা খাবেন। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই সময়ের ব্যবধানে খেলে ফাইবার সহজেই শরীর গ্রহণ করতে পারবে।
অনেকে সরাসরি কলা খেতে পছন্দ করেন না। সে ক্ষেত্রে কলার স্মুদি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আবার ফলের স্মুদির সঙ্গেও কলা মিশিয়ে নেওয়া যায়। কলা ও ওটসের স্মুদিও খেতে পারেন।
আরও পড়ুন- পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
কলার অপকারিতা
কলাতে কোনো ক্ষতি নেই বললেই চলে - তবে পটশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকার কারণেই, যাদের রেনাল ফেলিয়োর রয়েছে বা কোনও অসুখের কারণে পটাশিয়াম খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, তাদের কলা না খাওয়াই ভাল। ভিটামিন, মিনারেলের পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও পাওয়া যায় কলায়।
কলার প্রজাতি
কলা Musaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর দুটি গণ আছে যথা: Ensete ও Musa। এ পরিবারে প্রায় ৫০টি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত । Ensete গণের মাত্র ৬-৭টি প্রজাতি আছে, তবে এর মধ্যে মাত্র একটি প্রজাতি এ পর্যন্ত ইথিওপিয়ায় জন্মানো সম্ভব হয়েছে। Musa গণের প্রায় ৪০টি প্রজাতি রয়েছে। এর অধিকাংশ প্রজাতির উৎপত্তি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায়। প্রায় সব আবাদকৃত কলাই এ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত । এই গণকে আবার ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৯টি জাত রয়েছে । পার্বত্য এলাকায় বাংলা কলা, বন কলা, মামা কলা ইত্যাদি নামেও কলার কিছু বুনো জাত দেখা যায়। ক্রমশ কলার জাতের সংখ্যা বাড়ছে। গাছের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের কলা গাছকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা: লম্বা জাতের গাছ ও খাটো জাতের গাছ। পাকা অবস্থায় খাওয়ার জন্য কলার জাত ৪ প্রকার যথা:- সম্পূর্ণ বীজমুক্ত কলা: যেমন-সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর প্রভৃতি ।
- দু-একটি বীজযুক্ত কলা: যেমন-চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী ইত্যাদি ।
- বীজযুক্ত কলা: এটেকলা যেমন-বতুর আইটা, গোমা, সাংগী আইটা ইত্যাদি ।
- আনাজী কলাসমুহ: যেমন-ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়েরবাতি প্রভৃতি।
আরও জানুন -
মধু খাওয়ার নিয়ম এবং মধুর অসাধারণ গুনাগুন
তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও লেবুর পুষ্টিগুন
গরম পানি খাওয়ার নিয়ম ও গরম পানির উপকারিতা
লাল চা খাওয়ার নিয়ম ও লাল চায়ের উপকারীতা
বৃষ্টির পানির উপকার ও ব্যবহারের নিয়ম
দাতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকামাইগ্রেন কি কেনো হয় এবং হলে করনীয় কি
কলা চাষ পদ্ধতি
কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা যায়। প্রথম মৌসুম মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ। দ্বিতীয় মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে। তৃতীয় মৌসুম মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর। সাত-আটবার চাষ দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হয়। অতঃপর জৈবসার (যেমন গোবর, কচুরিপানা ইত্যাদি) হেক্টরপ্রতি ১২ টন হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। অতঃপর ২–২ মিটার দূরত্বে গর্ত খনন করতে হবে। প্রতিটি গর্তে ৬ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম খৈল, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমপি, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ১০ গ্রাম জিংক এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর প্রতিটি গর্তে নির্ধারিত জাতের সতেজ ও সোর্ড শাকার (তরবারি চারা) চারা রোপণ করতে হবে। এভাবে একরপ্রতি সাধারণত ১ হাজার থেকে ১ শত চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের পর ২ কিস্তিতে গাছপ্রতি ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম এমপি ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচের প্রয়োজন হয়। গাছ রোপণের প্রথম অবস্থায় ৫ মাস পর্যন্ত বাগান আগাছামুক্ত রাখা জরুরি। কলাবাগানে জলাবদ্ধতা যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সাধারণত কলাতে বিটল পোকা, পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস ও সিগাটোকা রোগ আক্রমণ করে থাকে। বিটল পোকায় আক্রান্ত হলে কলা সাধারণত কালো কালো দাগযুক্ত হয়। প্রতিরোধের জন্য ম্যালথিয়ন অথবা লিবাসিস ৫০ ইসিসহ সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। পানামা রোগে সাধারণত কলাগাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাছ লম্বালম্বি ফেটে যায়। এ রোগের প্রতিরোধে গাছ উপড়ে ফেলা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাঞ্চিটর ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কলার পাতা আকারে ছোট ও অপ্রশস্ত হয়। এটি দমনের জন্য রগর বা সুমিথিয়ন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সিগাটোগায় আক্রান্ত হলে পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। এক সময় এ দাগগুলো বড় ও বাদামি রং ধারণ করে। এ অবস্থা দেখা দিলে আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং মিলিটিলট-২৫০ ইসি অথবা ব্যাভিস্টিন প্রয়োগ করা যেতে পারে
ঠান্ডা সর্দি সারাতে জেনে নিন ঘোরোয়া উপায়
তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া
0 Comments