লালশাকের বর্ননা
লাল শাক এক প্রকারের শাক বা পাতা সবজি, এই পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। লাল শাক এক সময় শুধুমাত্র শীতকালে চাষ হতো কিন্তু বর্তমানে এটি সারাবছরই চাষ করা হয় এই শাকের রং লাল এবং রান্নার পর এটি থেকে লাল রং বের হয় । এই গাছের কান্ড থেকে পাতা ভেঙে নিয়ে আসার পর আবার সেই ভাঙা কান্ড হতে পুনরায় নতুন গাছ হয় কুশী গজায়।
লালশাক দেখতে লালচে এবং গোলাপি ধরনের হয়ে থাকে । এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে হিমোগ্লোবিনে । আমাদের দেশে অতি পরিচিত শাকগুলোর মধ্যে লালশাক এর তুলনা মেলা বড়ই । ছোট বাচ্চাদের জন্য লালশাক খুবই উপকারী। শিশুদের প্রচুর পরিমানে প্রয়োজন আয়রন এবং আয়োডিন। আর লালশাক আয়রনের পর্যাপ্ত উৎস।
কেবল মাত্র খাবার খাবার চিবাতে শিখেছে এবং খেতে পারে এমন বাচ্চাদের হজমশক্তির অবস্থা বুঝে দিনে দিনে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। বাড়ন্ত শিশু, পূর্ণ বয়স্কদের জন্যও বয়ে আনে সুফল।
শরির সুস্থ্য রাখার জন্য লাল শাকের গুরুত্ব অপরিসীম । ৩০ বছর বয়সের পর আমাদের শরীরে নানান সমস্যা দেখা দেই বা দিতে পারে । তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত লাল শাক খাওয়া জরুরী ।
আরও পড়ুন - ঠান্ডা সর্দি সারাতে জেনে নিন ঘোরোয়া উপায়
লাল শাকের পুষ্টিগুনঃ
ঠাণ্ডা জ্বরের চিকিৎসায় লালশাকঃ
- ঠাণ্ডার কারণে যারা জ্বরে ভুগছেন, তারা এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা পাত্রে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে এক মুঠো লাল শাক দিন। তারপর ওই পানি ফোটাতে দিন । যখন দেখবেন ফুটতে ফুটতে পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে দিন। এরপর পানি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এমনভাবে কয়েকদিন করলেই দেখবেন জ্বর সারিয়ে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন ।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে লালশাকঃ
- লাল শাকে থাকা ভিটামিন সি ( vitamin C ) রেটিনার ক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা চোখে কম দেখেন বা পরিবারে গ্লুকোমার মতো রোগের ইতিহাস যাদের মধ্যে রয়েছে, তারা আর সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই লাল শাক খাওয়া শুরু ঙ্করে দিন । অল্প দিনেই উপকার পাবেন।
হাড় মজবুত হয়ঃ
- লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, ( vitamin k ) যা মানব দেহের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । একবার হাড় শক্তপোক্ত হয়ে উঠলে অস্টিওপরোসিস মতো হাড়ের রোগ যে আর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না ।
হার্ট ভালো থাকেঃ
- লাল শাকে থাকা ‘ফাইটোস্টেরল’ নামক একটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে, তেমনি নানাবিধ হার্টের রোগের অ্যান্টিডোট হিসেবেও কাজ করে। সপ্তাহে কম করে ২-৩ দিন যদি লাল শাক খাওয়া যায়, তাহলে হার্টের কর্মক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
পড়ুন - স্বাস্থ্য ভালো রাখার কার্যকরি উপায়
অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দূর করে লালশাকঃ
- লাল শাকে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । অ্যানিমিয়া রোগীরা এই শাকটি খেতে পারেন। দুই আঁটি লাল শাককে পিষে রস সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে যদি নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে শরীরে প্রচুর পরিমানে রক্ত বৃদ্ধি হয় ।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়ঃ
- লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে আয় । এবং গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও হ্রাস পায়।
দাতের যত্নে লালশাকঃ
- লাল শাকের মূল দিয়ে দাঁত মেজে, লবণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে দাঁতের মধ্যে থাকা হলুদ ভাব কেটে যায়। এছাড়াও দাঁতের অন্যান্য সমস্যাগুলিও সমাধান হয় ।
চুল পড়া বন্ধে লালশাকঃ
- চুল পড়া বন্ধে উপকারী লাল শাক। লাল শাক ভাল করে বেটে তার মধ্যে এক চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণটি খান। চুল পড়া রোধ করবে ।
সুস্থ্য থাকতে জানুন - কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা ও কলমিশাকের ওষুধি গুনাগুন
নিম্ন রক্তচাপ অর্থাত লো - ব্লাড প্রেশার, দুর্বলতা, ক্রমশ শক্তি কমে যাওয়া, ডায়াবেটিস রোগী, অস্টিও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লালশাক পালন করে অপরিহার্য ভূমিকা।গর্ভবতী অবস্থা থেকে শিশুর জন্ম ও মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত লালশাক খুবই পুষ্টিকর খাবার ।
তবে এখানেও খেয়াল রাখা জরুরী-, বেশির ভাগ গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে। তাই েই শাক দুপুরে খাবারে খাওয়াই ভালো। কারণ, ইনটেসটাইন, অর্থাৎ খাবার হজমকারী জরুরি নালিবিশিষ্ট অঙ্গ অধিক রাতে কাজ করে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচল থাকে বেশি। আর রাতে শাক পরিহার করাই ভালো।
মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। মাসিক বন্ধ হওয়া নারীদের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে ত্বক ও চুলে আসে বৈরী ভাব। শরীরে দেখা দেই আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। এ অবস্থায় হতে পারে লালশাক খুবই উপকারী ও পুষ্টিকর বা প্রানবন্ত খাবার। দেহে রক্ত বাড়াবে আর ত্বক, চুল ও নখের পুষ্টি জোগাবে।
পুষ্টিমূল্য বিচারে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্যই লালশাক বেশ উপকারি একটি খাবার ।
শীতের সময় বাজারে গেলেই টাটকা লাল শাক দৃষ্টি কাঁড়ে সবার । এই লাল শাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট সবই রয়েছে। তা বলবো শীতের সময় নিয়মিত লালশাক খেতে ভুলবেননা । প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন এই শাক ।
যারা ডায়েট করছেন তারা অবশ্যই খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখতে ভুলবেননা ।
শরিরে ভালো রাখতে পড়ুন ঃ ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
লাল শাকের চাষ পদ্ধতি
লাল শাকের জাতঃ
- আমাদের দেশে ‘বারি লালশাক-১’ জাতের শাক চাষ ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।
- এ শাকের পাতার বোটা ও কাণ্ড নরম ও উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।
- প্রতি গাছে ১৫ থেকে ২০টি পাতা থাকে।
- গাছের উচ্চতা ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১০-১৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
- এ শাকের ফুলের রং লাল এবং বীজ গোলাকার হয়।
- বীজের উপরিভাগ কালো ও কিছুটা লাল দাগ মেশানো থাকে
জলবায়ুঃ
- সারাবছরই লালশাক চাষ করা যায়। তবে শীতের শুরুতে লালশাকের ফলন বেশি হয় ।
মাটির প্রকৃতিঃ
- প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সারাবছর ‘বারি লাল শাক-১’ এর চাষ করা হয়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি লালশাক চাষের জন্য উপযোগর
জমি তৈরি ও বীজ বপন
- লালশাক চাষের আগে জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ও মাটির অবস্থা বুঝে ৪-৬টি চাষ ও মই দিতে হবে।
- লালশাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। তবে সারিতে বীজ বপন করা সুবিধাজনক।
- এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
- একটি কাঠি দিয়ে ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর লাইন টেনে সারিতে বীজ বুনে মাটি সমান করে দিতে হবে।
লাল শাক চাষে মাটির প্রকৃতিঃ
- প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সারাবছর ‘বারি লাল শাক-১’ এর চাষ করা হয়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি লালশাক চাষের জন্য উপযোগী।
লাল শাকে সার দেয়ার নিয়মঃ
কৃষকদের মতে, গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লালশাক চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পঁচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরাপাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পঁচা সার তৈরি করা সম্ভব।
লাল শাকের পরিচর্যাঃ
- বীজ গজানোর এক সপ্তাহ পর প্রত্যেক সারিতে ৫ সেন্টিমিটার পর পর গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
- নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
- জমির উপরের মাটিতে চটা হলে নিড়ানি দেওয়ার সময় তা ভেঙে দিতে হবে।
লাল শাকের বাজার সম্ভাবনাঃ
লালশাক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই ছোট-বড় সবাই এই শাক খুব পছন্দ করে। যেহেতু এর চাহিদা সবার কাছেই আছে তাই লালশাক চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। লালশাক রপ্তানি করার জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। মনে রাখবেন, উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় ৫শ’ কেজি লালশাক পাওয়া যায়।
তথ্যসুত্র - উইকিপিডিয়া , জি নিউজ , একুশে টিভি
0 Comments