Auto Ads 1

কোরবানি ও আকিকা দেয়ার ইসলামিক নিয়ম

ইসলামে যতগুলো বিধান আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কোরবানি। কোরবানি দেয়া তাৎপর্যমণ্ডিত ও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। কোরবানিতে আছে আত্মত্যাগের মহিমা । আদি পিতা হজরত আদম (আ.)–এর ২ পুত্র হাবিল এবং কাবিল থেকে শুরু হয় কোরবানি দেয়ার নিয়ম এবং মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর পুত্র ইসমাইল (আ.)–এর আত্মবিসর্জনের মাধ্যমেও চলে এই কুরবানী, যা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তর্নীয় বা অম্লান থাকবে।

প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হোন, তাহলে তাঁদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। নিসাব বলতে বুঝাই সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা ও সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ ,অথবা এর সমমূল্যের পরিমান নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদকে বোঝায়।

আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা, ত্যাগ স্বীকার করা বা বিসর্জন দেওয়ার নামই কোরবানি । কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা। একটি ছাগল, একটি ভেড়া অথবা একটি দুম্বা হলো একটি কোরবানি এবং গরু, মহিষ ও উটে সাত ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ গরু,মহিশ,উট এগুলো কোরবানি সাত জনে মিলে দেয়া যায় অর্থাৎ ৭ ভাগের ১ ভাগ।

জিনি কোরবানি দিবেন কোরবানির সেই পশুটি তিনি নিজে জবাই করা উত্তম। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করলেও হবে। সাথে আরও কিছু দোয়া জানা থাকলে পড়া ভালো। । যিনি কোরবানি দিবেন, তাঁর মনের ইচ্ছাই কোরবানি দেয়ার নিয়ত হিসেবে যথেষ্ট এবং তা কবুল হয়। যদি নিজে জবাই করতে নাও পারেন তাতে কোনো সমস্যা হয়না, যেকোনো কাউকে দিয়ে জবাই করিয়ে নিতে পারেন। জবাইয়ের সময় নিজে উপস্থিত থাকাটা ভালো ।

আরও জানুন --   কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত ও ঋনগ্রস্থ ব্যাক্তির কোরবানি দেয়ার নিয়ম ?

কোরবানির গোশত ভাগের নিয়মঃ


কোরবানির গোশত ধনী–গরিব সবাই খেতে পারে। সুন্নাত হলো কিছু অংশ আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া, কিছু অংশ গরিব এবং পাড়া–প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং কিছু অংশ নিজের পরিবারের জন্য রাখা। তবে যত বেশি মানুষকে দেয়া যাবে, তত ভালো। অনেকে ৭ ভাগের ১ ভাগ গোশত পাড়া প্রতিবেশি আত্বীয়স্বজন ও গরিবদের দিয়ে থাকেন , অনেকে সামান্য কিছু রেখে পুরোটাই প্রতিবেশি আত্বীয়স্বজন ও গরিবদের মাঝে দিয়ে দেন । ত্যাগের কোরবানির গোশত নিজেদের ভোগের জন্য ফ্রিজে রাখা অনৈতিক ও অমানবিক।

একজন নারী যদি নিজে সামর্থ্যবান বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তাহলে সেই নারীর পক্ষেও কোরবানি ওয়াজিব। শিশুদের ওপর কোরবানিসহ কোনো ফরজ ওয়াজিব প্রযোজ্য নয়। হিজড়ারা মূলত নারী বা পুরুষ। তাই তারাও প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান হলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো কোরবানিও ওয়াজিব হবে।ওয়াজিব কোরবানি ছাড়াও ছোট–বড় জীবিত–মৃত যেকোনো কারও পক্ষ থেকে যেকোনো কেউ নফল কোরবানি আদায় করতে পারেন। এতে উভয়েই সওয়াব পাবেন। 

আকীকা দেয়ার নিয়মঃ

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-  একটি শিশুর জন্যে আকিকা দিতে হবে, সপ্তম দিনে। সপ্তম দিনে যদি কেউ আকিকা দিতে না পারে তবে ১৪ দিনের দিন আকিকা দিবে ১৪ দিনের দিনও যদি না পারেন তবে ২১ দিনের দিন দিবেন ,২১ দিনের দিনও যদি না দিতে পারেন  বা সক্ষম না হোন তবে কোনও ব্যক্তি সন্তানের যৌবনের আগে যে কোনও সময় আকিকা করতে পারেন।

কোরবানির মতো  সুস্থ-সবল ও ত্রুটিমুক্ত  হতে হবে আকিকার পশুটি । কোরবানির পশু কেনার সময় বা পশুটি পছন্দ করার সময় অবশ্যয়  শরিয়ত সম্মতভাবে যে সমস্ত বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন সেই সমস্ত বিষয়গুলো আকিকার পশুটির ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে। যে সমস্ত পশু গুলো দিয়ে কোরবানি দেয়া যায় না, সেই সমস্ত পশু দিয়ে আকিকাও দেয়া যাবেনা। আকিকার ক্ষেত্রে পশুর বয়স ও ধরনের দিক থেকে কোরবানির পশুর খেত্রেও যে সমস্ত গুন থাকা প্রয়োজন । ওই সমস্ত গুনগুলো দেখেই আকিকার পশুটিকেও নির্বাচন করতে হবে। (তিরমিযি)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন কারো কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে, সে যেনো গরু , ছাগল অথবা উট, দ্বারা আকিকা দেই।’ (আলমুজামুল আওসাত: ৩৭১) মেয়েদের জন্য একটি ছাগল এবং ছেলেদের জন্য দুটি ছাগল । ছেলেদের দুটি ছাগল আকিকা দেয়ার ক্ষেত্রে ছাগল দুটি দেখতে একই অথবা একই বয়সের হওয়া দরকার। ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.) এর পক্ষ হতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি করে দুম্বা দিয়ে আকিকা করেছিলেন।( সুনানে আবু দাউদ)

গরু, মহিষ অথবা উট কোরবানির অংশ হিসেবে যেভাবে ভাগ করা হয় এবং ৭ ভাগে কোরবানি দেওয়া যায়,একইভাবে গরু, মহিষ অথবা উট একটিকে সাত ভাগের অংশ হারে আকিকাও দেওয়া যায়। কোরবানি এবং আকিকা একসঙ্গে দেয়ার ব্যাপারে বিধী-নিষেধ নেই।

আকীকার আরবি দোয়াঃ

পশু জবাইয়ের দোয়া

পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কুরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালীগুলো কেটে দিলেই কুরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে।

 দোয়াটি হলো-

اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ

وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-


بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।


নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'

অন্য কেউ কুরবানি বা অন্য কারো কুরবানি করলে এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

আরও জানুন - ভালো মানুষের গুনাগুন ও খারাপ মানুষ চেনার উপায়

কোরবানি সম্পাদন

পশু জবাইয়ের মাধ্যমেই কোরবানি সম্পন্ন হয়। কোরবানির কোনো বিকল্প নেই। অর্থসম্পদ দান ও সদকার মাধ্যমে কোরবানি আদায় হয় না। সামর্থ্যবান যেকোনো ব্যক্তি বিশেষ সমস্যার কারণে যদি নিজে কোরবানির সময় উপস্থিত থাকতে না পারে বা সম্পাদন না করে তবে তার প্রতিনিধী হিসেবে কাউকে দিইয়ে সম্পাদন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যয় পশুর মূল্য দিতে হবে এবং ব্যবস্থাপনার যাবতীয় খরচ তাঁকেই বহন করতে হবে। কেউ যদি উপস্থিত থেকে বিনা পারিশ্রমিকে সমস্ত কাজ করে দেই তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

যদি কেউ কোরবানির পশু কেনার ব্যাপারে কোনো আইডিয়া না থাকে তাহলে সে তার বিশ্বস্থ কাউকে অথবা আত্বিয়স্বজনদের কাউকে দিয়ে সম্পাদন কারতে পারবেন। , যদি কেউ জবাই করা ও গোশত বিতরণ করা ইত্যাদি ঝামেলা পোহাতে না চান।, তবে বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তি-আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কাছের কোনো লোকজন অথবা নির্ভরযোগ্য কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা সেবা সংস্থার কাছে কোরবানি সম্পাদনের দায়িত্ব দিতে পারেন।

ধনবান মানুষেরা কোরবানির দেয়ার পাশাপাশি অভাবী গরিব , দুর্দশাগ্রস্ত, অসহায়, দুঃখী, মানুষকে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য বেশি বেশি আর্থিক সহায়তা ও দান–অনুদান, এবং পোশাক বা জামাকাপড় প্রদান করেন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ঈদসামগ্রী কিনে দেওয়ার মাধ্যমেও বেশিবেশি পুণ্য অর্জন করতে পারেন ।

তথ্যসূত্র – প্রথমআলো এবং উইকিপিডিয়া

প্রথম আলো তথ্য নিয়েছেন -  বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

Post a Comment

0 Comments

Ads 4