ফেসবুকের জনপ্রিয়তা যত বাড়ছে, ততই নিয়মনীতি মানার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুকের নিয়মনীতি থেকে সামান্য বিচ্যুত হলেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ ও নিষ্ক্রিয় করার ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধ হওয়া অ্যাকাউন্ট দ্রুত উদ্ধার করা যায়। কিন্তু যখন ফেসবুকের নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয় থাকে, তখন বন্ধ হওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কেন বন্ধ হয়?
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার কারণ তিনটি। সাইট রক্ষণাবেক্ষণ, ত্রুটি ও নিরাপত্তা। অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের জন্য ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগের আগে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার কারণ বোঝা দরকার। এতে ফেসবুক টিমের কাছে অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের বিষয়টি ঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়।
সাধারণত সাইট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সাময়িক বন্ধ হয়ে গেলে তা দ্রুত ঠিক করা যায়। এ রকম হলে ফেসবুক নিজ থেকে অ্যাকাউন্ট ঠিক করে দেয়।
ব্যবহারকারী বা সিস্টেম ত্রুটির কারণেও কোনো অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুকের কাছে কোনো অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কনটেন্ট ও স্প্যাম ছড়ানোর অভিযোগ যায়। ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে ফেসবুককে কেউ অভিযোগ (রিপোর্ট) দিলে ব্যবহারকারীর সে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া অ্যাকাউন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে অ্যাকাউন্ট মুছে দেওয়ার অভিযোগ পেলে ফেসবুক সে অ্যাকাউন্ট সরিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে যদি ভুলবশত অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে ফেসবুকের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল বা আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ফরম পূরণ করতে হয়।
https://www.facebook.com/help/contact/logout?id=260749603972907 —এ ফরম জমা দিলে ফেসবুক বিষয়টি তদন্ত করে। তবে মনে রাখতে হবে, ওই অনুরোধ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিক করা হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখে ফেসবুক।
ফেসবুক তাদের নিরাপত্তা পদক্ষেপের বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়। যদি কোনো অ্যাকাউন্ট ফেসবুক কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি বলে মনে করে, তখন এর সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্ল্যাগ বা পতাকা দেখিয়ে রিভিউ বা পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়। তখন ব্যবহারকারী তাঁর অ্যাকাউন্টে আর ঢুকতে পারেন না। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীর অ্যাকসেস বন্ধ হয়ে যায়। ফেসবুক যেসব বিষয়কে নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে রাখে, তার মধ্যে আছে ভুয়া পরিচয় দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি, অবৈধ কনটেন্ট প্রচার করা, ডেটিংয়ের জন্য অযাচিত যোগাযোগ, অন্য ব্যবহারকারীকে নিপীড়ন বা বিরক্ত করা, অনুপযুক্ত বা স্প্যাম বিজ্ঞাপন। এ ছাড়া সাধারণ সন্দেহজনক কার্যক্রমকেও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলেছে ফেসবুক। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত কারণ ধরতে না পারলেও কয়েকটি উপায়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরে যাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে ফটো আইডি ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া। ফেসবুকের যদি সন্দেহ হয় যে আপনার একাধিক অ্যাকাউন্ট আছে কিংবা ভুয়া নাম দিয়ে আপনি একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তবে অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এতে আপনার কাছে একটি বার্তা দেখাবে। এতে লেখা থাকবে ‘We'll get in touch with you at the email address you provided after we've reviewed your ID. You will now be locked out of Facebook’ এ ক্ষেত্রে ফেসবুক তদন্ত শেষ না করে যোগাযোগ করা পর্যন্ত আর কিছু করার নেই। অনেক সময় ফেসবুক বাড়তি তথ্য পর্যালোচনা করে। তখন ব্যবহারকারী একটি বার্তা পান যাতে লেখা হয় ‘Unfortunately, you won't be able to access your account while we're reviewing these additional documents. We appreciate your patience, and we'll get back to you as soon as we can. এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পরিচয় শনাক্ত করতে বাড়তি তথ্য ফেসবুককে দিতে হবে।
ফেসবুক কী ধরনের ডকুমেন্ট গ্রহণ করে, কীভাবে তা আপলোড করতে হবে, আপলোড করার প্রয়োজনীয়তা এবং ডকুমেন্ট আপলোড করার পরে কী ঘটে তা জানার লিংক https://www.facebook.com/help/contact/260749603972907 ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উদ্ধারে তথ্য দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন ঠিকমতো স্ক্যান করা হয়। এতে নাম, জন্মদিন, ছবি ঠিকমতো যাতে দেখা যায়। ডকুমেন্ট স্ক্যান করে কম্পিউটারে নিতে হবে। এরপর ফেসবুকের কন্টাক্ট ফরমে গিয়ে আইডি আপলোড করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অ্যাকাউন্ট ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বা অনুরোধে সাড়া দিতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগাতে পারে ফেসবুক। তবে অ্যাকাউন্ট তৈরিতে ভুয়া আইডি ব্যবহার করা হয়, তবে অ্যাকাউন্ট ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফেরত পাওয়ার সময় নির্ভর করে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার কারণের ওপর। অ্যাকাউন্ট পাইরেটেড, ফিশিং আক্রমণের শিকার বা হ্যাক হলে তা বন্ধ করে দিতে পারে ফেসবুক। এ ক্ষেত্রে দুইভাবে এগোনো যায়। ব্রাউজার পরিষ্কার ও বাড়তি যাচাই বা ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ৯৬ ঘণ্টা ফেসবুক চালুর চেষ্টা না করা ভালো। ব্রাউজার ক্যাশ পরিষ্কার ও কুকি মুছে দিয়ে অ্যাকাউন্ট চালু করতে হবে। তারপরও যদি ফেসবুকে ঢোকা না যায়, তবে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করে ফেসবুক থেকে কোড নিয়ে অনলাইনে ঢোকা যাবে। আরেকটি উপায় হচ্ছে বন্ধুদের ট্যাগ করা ছবিতে তাদের শনাক্ত করে।
অবশ্য অ্যাকাউন্ট লক হওয়া ঠেকানো বা সব সময় চালু রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার শতভাগ কোনো উপায় নেই। তবে কিছু উপায়ে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়া ঠেকানো যায়। শুরুতেই ফেসবুকের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কিত বিবৃতি পর্যালোচনা করে দেখা (Facebook's Statement of Rights and Responsibilities) এবং ফেসবুকের নিয়মনীতি মানা। প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার না করা। একই সময়ে একাধিক ডিভাইস থেকে ফেসবুকে না ঢোকা। এটি ফেসবুক নিরাপত্তা হুমকি বলে মনে করে। তথ্যসূত্র: ফেসবুক, সিসিএম, দ্য নেক্সট ওয়েব ।
0 Comments